Notification texts go here Contact Us Buy Now!
Posts

কুরআন দিয়ে নিজের চিকিৎসা করুন pdf download

Author
Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated


মহান আল্লাহর বাণী

“আর আমি কুরআনে যা কিছু নাযিল করছি তা হচ্ছে ঈমানদারদের জন্যে তাদের রােগের উপশমকারী ও রহমত। কিন্তু এসত্ত্বেও তা যালিমদের জন্যে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি

করে না।” -সূরা ১৭; বনী ইসরাঈল ৮২

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“তােমরা যাবতীয় রােগ-ব্যাধির নিরাময়ে (চিকিৎসায়) দুটো জিনিসকে আঁকড়ে ধর- মধু এবং কুরআন।”

-সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৪৫২

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাে বলেছেন,

“সর্বোত্তম ঔষধ হচ্ছে, আল কুরআন।”

-সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৫০১

কুরআন হচ্ছে নিরাময় ও রহমত মানসিক ও শারীরিক এবং দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় রােগ ব্যাধির পরিপূর্ণ চিকিৎসা হচ্ছে আল কুরআন। তবে এ থেকে নিরাময় লাভের তাওফীক সবাইকে দেওয়া হয় না; সবাই এর উপযুক্তও নয়। রােগী সততা, আস্থা, পরিপূর্ণ কবুল, অকাট্য বিশ্বাস এবং এর যাবতীয় শর্ত পূরণের মাধ্যমে যদি এ কুরআনকে তার রােগের উপর উত্তমভাবে প্রয়ােগ করে তাহলে কোনাে ব্যাধিই কখনাে এর মােকাবিলা করতে পারবে না। কিভাবে রােগ-ব্যাধি আসমান-যমিনের মালিকের ঐ কথার মােকাবিলা করবে, যা তিনি পাহাড়ের উপর নাযিল করলে পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিত? যমিনের উপর নাযিল করলে যমিনকে বিদীর্ণ করে দিত? সুতরাং, শরীর ও মনের এমন কোনাে রােগ নেই অথচ আল কুরআনে তার চিকিৎসার পথ দেখানাে আছে, এর প্রতিকার এবং তা থেকে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যাকে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবের বুঝ দান করেছেন, সে-ই কেবল এ থেকে সার্বিক সুস্থতা লাভ করে ধন্য হয়।

কুরআন যাকে নিরাময় করবে না আল্লাহও তাকে নিরাময় করবেন না। আর যার জন্যে কুরআন যথেষ্ট নয়; আল্লাহও তার জন্যে যথেষ্ট হবেন না। (যাদুল মা'আদ ইবনুল কাইয়্যেম খণ্ড-৩, পৃ. ১৭৮-১৭৯)

আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে। সকল প্রিয়জনের জন্যে উৎসর্গ যাদেরকে আমি ভালােবাসি,

সে- “প্রাণিকুল, যারা আল্লাহর পবিত্রতার গুণগান গায়।

পর্বতমালা, যারা শির তুলে আল্লাহর জন্য রয়েছে সিজদায় ।

প্রতিটি ফুল, যা তার প্রার্থনার নেশায় গর্বভরে দোল খায়। মেঘমালা, যা আল্লাহর নির্দেশে আকাশে উড়ে বেড়ায়।। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এরাই আমার ভালােবাসার পাত্র।

এমন এক যুগে, যে যুগে খােদাভীতি বিরল।” - আবুল ফিদা

মহান আল্লাহ ছাড়া ক্ষতিকে

অপসারণ করার আর কেউ নেই। নিশ্চয়ই সকল কিছুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা এবং একমাত্র তিনিই সবকিছু করতে সক্ষম, সবকিছুর প্রতি অনুগ্রহকারী একমাত্র তিনি। সুতরাং তিনি দয়া না করলে আর কে করবে? তিনিই আল্লাহ, যিনি তাঁর বিশাল ক্ষমতা ও রহমতে যাবতীয় বিপদ-মুসিবত অপসারণ করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

“যিনি আমাকে পয়দা করেছেন, অতঃপর তিনিই আমাকে (অন্ধকারে) চলার পথ দেখিয়েছেন। তিনি আমাকে আহার্য দেন। তিনিই আমার পানীয় যােগান। আর আমি যখন রােগাক্রান্ত হই তখন তিনিই আমাকে রােগমুক্ত করেন। তিনি আমার মৃত্যু ঘটাবেন, তিনি আমাকে আবার নতুন জীবন দেবেন। বিচারের দিন তাঁর কাছ থেকে আমি এ আশা করব যে, তিনি আমার গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন।” (সূরা ২৬; শুআরা ৭৮-৮২) অতএব, তাঁর শেফা ছাড়া কোনাে শেফা নেই, তাঁর বিপদমুক্তি ছাড়া কোনাে বিপদমুক্তি নেই এবং তার শক্তি ছাড়া কোনাে শক্তি নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,

“যদি আল্লাহ তাআলা তােমাকে কোনাে দুঃখ-কষ্ট দেন, তাহলে তিনি ছাড়া অন্য কেউ নেই তা দূরীভূত করার। আর তিনি যদি তােমার কোনাে কল্যাণ চান, তাহলে তার সে কল্যাণ রদ করারও কেউ নে৯. তিনি তার বান্দাদের মধ্যে যাকে চান তাকেই কল্যাণ পৌছান তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।” (সূরা ১০; ইউনুস ১০৭)।

এ কারণেই আইয়ুব (আ) যখন ইজ্জত এবং মহত্ত্বের মালিক, ক্ষমার একমাত্র অধিকারী, শেফাদানকারী, সকলের জন্যে যথেষ্ট স্বীয় নির এবং বিশাল ক্ষমতার দ্বারা সকল বিপদ অপসারণকারী মহান আলাহ নিকট চরম অসুস্থতার মুহূর্তে কায়মনােবাক্যে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আহ্বান করলেন।

আল্লাহ তাআলার ভাষায়,

“স্মরণ করুন! যখন আইয়ুব (আ) তার মালিককে ডেকে বলেছিলেন, হে আল্লাহ আমাকে এক কঠিন অসুখ পেয়ে বসেছে, আমায় আপনি সুস্থ করে দিন, আপনিই হচ্ছেন দয়ালুদের সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।” (সূরা ২১; আম্বিয়া ৮৩) যাবতীয় পবিত্রতা ও গুণগান আপনারই জন্যে, আপনি আমাদেরকে আপনার নিকট চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমাদেরকে তা কবুলের ওয়াদা করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার যে কষ্ট ছিল তা আমি ভর করে দিলাম, তাঁকে তাঁর পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিলাম, তাদের সবাইকে আমার কাছ থেকে বিশেষ দয়া এবং আমার বান্দাদের জন্যে উপদেশ হিসেবে আরাে সমপরিমাণ দান করলাম।” (সূরা ২১; আম্বিয়া ৮৪)। সতরাং, রােগীর উচিত বেশি বেশি দু'আ করা এবং কবুলের পূর্ণ আস্থা-বিশ্বাস সহকারে আল্লাহর নিকট চাওয়া যে, তিনি তাকে সুস্থ করবেন, রােগমুক্ত করবেন আর সে যেন আল্লাহর সুন্দর সন্দুর নামগুলাে দিয়ে দু'আ করে।

“(হে আমার রব!) আমাকে এক কঠিন অসুখ পেয়ে বসেছে, আর আপনি তাে হচ্ছেন দয়ালুদের সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।” (সূরা ২১; আম্বিয়া

এতে কোনাে সন্দেহ নেই যে, আল্লাহর রহমত তাকে ঢেকে ফেলবে এবং আল্লাহ তার ওপর থেকে বিপদ সরিয়ে দেবেন। অতএব, সকল পবিত্রতা আল্লাহর জন্যে; বনি আদম কতই না দুর্বল।

করানাের ব্যাপারে দলীল কী? আল্লাহ তাআলা বলেন,

“আর আমি কুরআনে যা কিছু নাযিল করি তা হচ্ছে ঈমানদারদের জন্যে (তাদের রােগের) উপশমকারী ও রহমত। কিন্তু এ সত্তেও তা যালিমদের জন্যে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না।” (সূরা ১৭; বনী ইসরাঈল ৮২) । কুরআনে কারীমের এ মহান আয়াত নিয়ে যিনি গবেষণা করবেন তিনি। নিশ্চিতভাবে এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারবেন যে, কুরআন নিরাময় এবং রহমত। এতে আশ্চর্যান্বিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ, এ হচ্ছে। আল্লাহর সে কালাম, যার সামনের অথবা পেছনের কোনাে দিক থেকেই বাতিল আসতে পারে না। সকল পবিত্রতা সে সত্তার জন্যে, যার নির্দেশ ৩ (কাফ) এবং ৩ (নূন)-এর মধ্যে নিহিত। তিনি যখন কোনাে কিছু সৃষ্টি করতে চান তখন বলেন, "} হয়ে যাও। আর তখনই তা হয়ে যায়। কাজেই আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়িত ও প্রতিষ্ঠিত হবে; আর তা ২ শব্দের মধ্যে। যদি শুধু তাঁর শব্দের মধ্যে এমন প্রভাব থাকে তাহলে তার সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ কালামের প্রভাব কেমন হবে? যাতে তিনি বলেছেন,

“আর আমি কুরআনে যা কিছু নাযিল করি তা হচ্ছে, ঈমানদারদের জন্যে (তাদের রােগের উপশমকারী ও রহমত।” (সূরা ১৭; বনী ইসরাঈল ৮২) নিঃসন্দেহে আল্লাহর কথা সত্য, আল্লাহর নামের শপথ, পূর্ণ আহা এবং বিশ্বাস নিয়ে যে ব্যক্তি কোনাে রােগীর ওপর কুরআন পড়বে, আল্লাহর কালাম এবং তার বরকতে সে সুস্থ হয়ে যাবে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“অতএব, তােমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা, এ কুরআনের এক প্রান্ত আল্লাহর হাতে আর আরেক প্রান্ত তােমাদের হাতে। একে তােমরা আঁকড়ে ধর, কখনাে তােমরা ধ্বংস হবে না। এরপর কখনাে তােমরা পথহারা হবে না।” (আত-তারগীব ১/৭৯)। আর ইবনে মাসউদের হাদীস, যা ইবনে মাজাহ ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

“তােমরা যাবতীয় রােগ-ব্যাধির নিরাময়ে (চিকিৎসায়) দু’টো জিনিসকে আঁকড়ে ধর- মধু ও কুরআন।” আর মধু সম্পর্কে যেমনটি আমরা জানি, এটি সে আল্লাহর সৃষ্টি, যিনি সবকিছু সূক্ষ্ম ও দৃঢ় করে বানিয়েছেন। তিনি মধু মক্ষিকার অন্তরে এমন অনুভূতি ঢেলে দিয়েছেন, সে যেন আল্লাহর সহজ করে দেওয়া রাস্তাসমূহে চলে হরেক রকমের ফল থেকে খাবার আহরণ করে অবশেষে আল্লাহর নির্দেশে এমন মধু তৈরি করে যাতে মানুষদের জন্যে সুস্থতা রয়েছে। যদি মধু, যা একটা সময়ের পর নষ্ট হয়ে যায় তার এমন নিরাময়কারী শক্তি থাকে এবং শক্তি উদ্যমতা আর রােগমুক্ততা দান করতে পারে, তাহলে শরীর মন এবং আত্মার উপর আল্লাহর কালামের কেমন শক্তি এবং প্রভাব হতে পারে? নিঃসন্দেহে। সেটি রহমত এবং সুস্থতা ছাড়া আর কিছু নয়। আর যেমনটি ইবনুল কাইয়্যেম আল যাউজিয়্যাহ তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ৬kjj -তে উপরিউল্লিখিত হাদীসের টীকায় বলেছেন, প্ৰাপ্রদত্ত আর মানবীয় চিকিৎসা, দৈহিক আর আত্মীক চিকিৎসা এবং আসমানী আর যমিনী চিকিৎসাকে একত্রিত করা হয়েছে এ হাদীসে।

হ্যা, মানুষ যদি কুরআন এবং মধুর দ্বারা চিকিৎসা করে তাহলে সে দু’শক্তিকে একত্রিত করলাে, আসমানী শক্তি আর যমিনী শক্তি, আর সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। তবে আল্লাহর কালাম (কুরআন) অধিক মহান ও শক্তিশালী। যাকে কুরআন সুস্থ করে না, তাকে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সুস্থ করতে পারবে না। মানুষ যদি কুরআনের সুস্থতা এবং তার ঔষধি শক্তির ব্যাপারে সন্দেহ করে তাহলে হতে পারে সে সুস্থ হতে চাইবে এমন কিছুর দ্বারা যাতে ফিত্না রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ইবলিস তাকে তার দীনের ব্যাপারে গােলকধাঁধায় ফেলে দেবে, তখন কুরআনের ব্যাপারে তার অন্তরে সন্দেহ দানা বাঁধবে। এমন ব্যক্তির সুস্থতা কখনাে স্থায়ী হবে না, আর তার প্রতি কখনাে রহম করা হবে না। কেননা, সে সর্বোৎকৃষ্টকে ছেড়ে দিয়েছে আর আঁকড়ে ধরেছে নিকৃষ্টকে। তবে এতে কোননা দোষ নেই যে, কুরআনের সাথে অন্যান্য ঔষধ এবং আল্লাহর বরকত ও তার সুস্থতা কামনার দ্বারা চিকিৎসা করবে। প্রিয়নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের দ্বারা স্বীয় নাফসকে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্যে রক্ষাকারী হিসেবে ব্যবহার করতেন, যাতে করে আল্লাহ তাআলা তাকে যাবতীয় রােগবালাই থেকে হেফাযত করেন। আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “প্রত্যেক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় যেতেন তখন তার হাতের তালুদ্বয়কে একত্রিত করে তাতে ফু দিতেন আর

[অর্থাৎ সূরা ইখলাস, ফালাক, ও নাস পড়তেন] অতঃপর দু'হাত দিয়ে শরীরের যতটুকু অংশ সম্ভব মুছতেন। মাথা থেকে শুরু করে তার চেহারা এবং শরীরের সামনের অংশে হাতের তালুদ্বয় বুলাতেন। তিনি তিনবার এ কাজটি করতেন।” (সহীহ বুখারী: ৬৩১২)

আব ওবায়দা বিন জ্বালহা বিন মােছাররেফ বর্ণনা করেন, “বলা হয়, যখন অসুস্থ ব্যক্তির নিকট কুরআন পড়া হয়, এর কারণে সে কষ্টের লাঘবতা অনুভব করে।” আবু হােরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোনাে সম্প্রদায় আল্লাহর ঘরসমূহের কোনাে ঘরে একত্রিত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করলে এবং পরস্পর কুরআন নিয়ে চর্চা করলে তাদের উপর আসমান থেকে প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়। আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে ফেলে, ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে, আর আল্লাহ তাআলা তাঁর নিকট যারা রয়েছে (অর্থাৎ ফেরেশতারা তাদের মাঝে এদেরকে নিয়ে আলােচনা করেন। (সহীহ মুসলিম: ২৬৯৯, সুনানে আবু দাউদঃ ৩৬৪৩) প্রশান্তি আর রহমত অবতীর্ণ হওয়ার পর, ফিরিশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখা আর তাদেরকে নিয়ে আল্লাহ তাআলার স্বপ্ৰশংস আলােচনার পর তাদের মধ্যে কোনাে ব্যাধি থাকতে পারে? সকল পবিত্রতা সেই সম্মানিত দাতা ও দানকারী সত্তার জন্যে, যিনি ওয়াদা করেছেন, তার ওয়াদা সত্য। তিনি বলেছেন, তাঁর বলাও

অতএব, কিভাবে কুরআন সুস্থতাদানকারী না হয়ে পারে? সে তাে এমন কুরআন, তাকে যদি পাহাড়ের উপর নাযিল করা হতাে তাহলে পাহাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যেত, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ত এবং তার মহাপরাক্রমশালী এক স্রষ্টা ও পালনকর্তার জন্যে নতশির হয়ে যেত। নিঃসন্দেহে তিনি তাঁর রহমত এবং সম্মানিত কালামের বদৌলতে যেকোনাে রােগ নিরাময় করে দেবেন। কেননা, তিনি কোনাে জিনিসকে বলেন, ' (হও) আর তখনি তা হয়ে যায়। এই শব্দের চেয়েও অনেক বেশি বড় ও সম্মানিত হচ্ছে তাঁর ঐ কুরআন,

যার তিলাওয়াত দ্বারা আল্লাহর ইবাদত করা হয়। যা সৃষ্টির সেরা, আল্লাহর হাবীব, আমাদের সম্মানিত রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

“আমি যদি এ কুরআন কোনাে পাহাড়ের ওপর নাযিল করতাম তাহলে আপনি দেখতেন যে, সে আল্লাহর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।” (সূরা ৫৯; হাশর ২১)। আবু হােরায়রা (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মারফু’ সনদে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

“আল্লাহ এমন কোনাে রােগ দেননি, অথচ তার জন্যে নিরাময়ের ব্যবস্থা রেখেছেন।” (সহীহ বুখারী: ৫৬৭৮) আমাদের সকলেরই জানা যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্ব নির্ধারিত ফায়সালা ব্যতীত কোনাে মানুষ রােগাক্রান্ত হয় না। হতে পারে তা তাকে যাচাই এবং পরীক্ষার জন্যে, তার গুণাহসমূহ মােচনের জন্যে অথবা তার কৃতকর্ম (যুলুম বা পাপের শাস্তি স্বরূপ। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফায়সালা। শুরুতে এবং শেষে কখনই এ থেকে পালানাের সুযােগ নেই। না! আল্লাহ না চাইলে রােগী কখনও সুস্থ হবে না। তিনিই আসমান থেকে রােগ নামিয়েছেন এবং এর সাথে এর ঔষধও নাযিল করেছেন। সকল পবিত্রতা আল্লাহরই জন্যে, সবার আগে এ কুরআন হচ্ছে সুস্থতা এবং রােগ মুক্তির গােপন ভেদ আর মহৌষধ। আল্লাহর পক্ষ থেকে একে মানুষের জন্যে রহমত আর সম্মানিত নিরাময় হিসেবে নাযিল করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“আর আমি কুরআনে যা কিছু নাযিল করি তা হচ্ছে (তাদের রােগের) উপশমকারী ও রহমত।” (সূরা ১৭; বনী ইসরাঈল ৮২) যে কুরআনকে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা নাযিল করেছেন, তার চেয়ে মর্যাদাবান কোনাে কিছু কি পাওয়া যাবে? এটি তার মহান কালাম, তিনিই তার নির্দেশে তাকদীর পরিবর্তন করতে পারেন। রােগ তাঁর নির্ধারণেই হয়েছে। আবার তিনিই কুরআনের বরকতে স্বীয় ক্ষমতায় রােগীকে সুস্থ করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

“(সামগ্রিকভাবে গােটা) দুনিয়ার ওপর কিংবা (ব্যক্তিগতভাবে) তােমাদের ওপর যখনি কোনাে বিপর্যয় আসে, তাকে অস্তিত্ব দান করার (বহু) আগেই তা (ও তার বিবরণ) একটি গ্রন্থে লেখা থাকে, আর আল্লাহ তাআলার জন্যে এ কাজ অত্যন্ত সহজ, (আগেই লিখে রাখার এ ব্যবস্থা এ জন্যেই রাখা হয়েছে) যাতে করে তােমাদের কাছ থেকে যাকিছু সুযােগ-সুবিধা) হারিয়ে গেছে তার জন্যে তােমরা আফসােস না করাে এবং তিনি তােমাদের যা কিছু দিয়েছেন তাতেও যেন তােমরা বেশি হর্ষোৎফুল্ল না হও; আল্লাহ তাআলা এমন সব লােকদের ভালােবাসেন না যারা ঔদ্ধত্য ও অহংকার প্রদর্শন করে।” (সূরা ৫৭; হাদীদ ২২-২৩)।

আল্লাহর কুদরতের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের বরকতে ইউসুফ (আ) তার ভাইদের নির্দেশ দিয়েছেন। তারা যেন ঐ জামা যা একদিন মিথ্যা অপবাদের বিরুদ্ধে (অথচ তিনি ছিলেন নির্দোশ) সাক্ষী ছিল। আর আজকে তা নিদর্শন এবং প্রমাণস্বরূপ বিদ্যমান তাদের পিতা ইয়াকুব (আ)-এর চেহারার উপর ঢেলে দেয়; নির্দেশ মােতাবেক যখন জামাটি ইয়াকুব (আ)-এর চেহারার উপর রাখা হলাে। আল্লাহর এক অলৌকিক ক্ষমতা বলে ইয়াকুব (আ) খন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন। পাবেন না কেন? এতাে আল্লাহর কালাম, যা চিরভাস্বর, কখনাে লয় প্রাপ্ত হবে না। আর ইউসুফ (আ)-এর জামা তাে পুরনাে হবে। এতদসত্ত্বেও এ জামা আল্লাহর কুদরত এবং তাঁর ইচ্ছায় ইয়াকুব (আ)-এর অন্ধত্ব থেকে মুক্তির কারণ হয়েছে। সুতরাং, করুণাময় আল্লাহর কালাম যে সকল রােগের চিকিৎসা। একে অসম্ভব মনে করা বা বিস্ময় প্রকাশ করার কিছুই নেই। আমরা তাে এও জানি যে, কালােজিরাকে আল্লাহ তাআলা সকল রােগের নিরাময়কারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী,

তােমরা এ কালােজিরাকে গ্রহণ করবে। কেননা, এতে মৃত্যু ছাড়া সকল রােগের চিকিৎসা রয়েছে। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম) অতএব, কোনাে সন্দেহ নেই; বরং নিশ্চিত, অকাট্য এবং পূর্ণ বিশ্বাস সহকারে বলা যাবে যে, দয়াময় আল্লাহর কালাম কুরআন মানুষের যাবতীয় প্রকাশ্য ও গােপন; দৈহিক ও মানসিক ব্যাধিসমূহের জন্যে সুস্থতা। আর আমি অকাট্যভাবে এ সিদ্ধান্ত দিতে পারি যে, আল্লাহ তাআলার বাণী, “আর আমি কুরআনে যা কিছু নাযিল করি তা হচ্ছে (তাদের রােগের) উপশমকারী ও রহমত।” (সূরা ১৭; বনী ইসরাঈল ৮২)। দ্বারা যে বিষয়টি প্রমাণিত তথা কুরআন মুমিনদের জন্যে শেফা ও রােগমুক্তির মাধ্যম- এতে যে সন্দেহপােষণ করবে, নিঃসন্দেহে সে। সত্যকে অস্বীকারকারী আর আল্লাহর কিতাবকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী। আল্লাহর জন্যে সকল পবিত্রতা, এবং , এ দুটি শব্দ নিয়ে যে গবেষণা করবে, সে অনুধাবন করতে পারবে যে, সুস্থতার জন্যে রহমত জরুরি। কেননা, হতে পারে একজন রােগী রােগমুক্ত হলাে। কিন্তু সম্ভাবনা আছে যে, রােগ তাকে পুনরায় আক্রমণ করবে। অথবা সুস্থ হবে, কিন্তু একেবারে কাহিল হয়ে পড়বে বা শরীরের অন্যকোনাে অঙ্গ খারাপ হয়ে যাবে আর মনের শান্তি নষ্ট করে দেবে। পক্ষান্তরে কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত এবং নিরাময় নিয়ে আসে, যাতে করে রােগী আল্লাহর বরকতে যন্ত্রণা থেকে পরিপূর্ণভাবে আরাম বােধ করে। ইবনুল কাইয়্যেম বলেন, মানসিক ও শারীরিক, দুনিয়া এবং আখিরাতের যাবতীয় রােগ-ব্যাধির পরিপূর্ণ চিকিৎসা হচ্ছে আল : কুরআন।

তবে এ থেকে নিরাময় লাভের তাওফীক সবাইকে দেওয়া হয় না। আর সবাই এর উপযুক্তও নয়। রােগী সততা, আস্থা, পরিপূর্ণ কবুল, অকাট্য বিশ্বাস এবং এর যাবতীয় শর্ত পূরণের মাধ্যমে যদি এ কুরআনকে উত্তমভাবে তার রােগের উপর প্রয়ােগ করে তাহলে কোনাে ব্যাধিই কখনাে এর মােকাবিলা করতে পারবে না। কিভাবে রােগব্যাধি আসমান-যমিনের মালিকের ঐ কথার মােকাবিলা করবে, যা তিনি পাহাড়ের উপর নাযিল করলে পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিত? যমিনের উপর নাযিল করলে যমিনকে বিদীর্ণ করে দিত? সূতরাং শরীর ও মনের এমন কোনাে রােগ নেই অথচ আল কুরআনে তার চিকিৎসার পথ দেখানাে আছে, এর প্রতিকার এবং তা থেকে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যাকে আল্লাহ তাআলা তার কিতাবের বুঝ দান করেছেন, সে-ই কেবল এ থেকে সার্বিক সুস্থতা লাভ করে ধন্য হয়। করআন যাকে নিরাময় করবে না, আল্লাহও তাকে নিরাময় করবে না। আর যার জন্যে কুরআন যথেষ্ট নয়, আল্লাহও তার জন্যে যথেষ্ট হবেন । (যাদুল মা'আদ ইবনুল কাইয়্যেম খণ্ড-২, পৃ. ১৭৮-১৭৯)।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

“আমি যদি এ কুরআন (আরবী ভাষার বদলে) আজমী (অনারব ভাষায়) বানাতাম, তাহলে এরা বলতাে, কেন এর আয়াতগুলাে (আমাদের ভাষায়) পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হলাে না (তারা বলতাে, এ কি আজব ব্যাপার); এটা (নাযিল করা হয়েছে) আজমী (ভাষায়), অথচ এর বাহক হচ্ছে আরবী; (হে রসূল,) আপনি বলুন, তা (গােটা কুরআন) হচ্ছে। (মূলত) ঈমানদারদের জন্যে হেদায়াত (গ্রন্থ) ও (মানুষের যাবতীয় রােগ-ব্যাধির) নিরাময়; কিন্তু যারা (এর ওপর ঈমান আনে না তাদের কানে (বধিরতার) ছিপি আঁটা আছে, (তাই) কুরআন তাদের ওপর (যেন) একটি অন্ধকার (পর্দা, এ কারণেই সত্য কথা শােনা সত্ত্বেও তারা এর সাথে এমন আচরণ করে); যেন তাদের অনেক দূর থেকে ডাকা হচেছ (তাই কিছুই বুঝতে পাচ্ছে না)। (সূরা ৪১; হা-মীম আস সাজদা)

লেখক : আবুল ফিদা মুহাম্মাদ ইজ্জত মুহাম্মাদ আরেফ
প্রকাশনী : সবুজপত্র পাবলিকেশন্স
বিষয় : নামায ও দোয়া-দরুদ, বিবিধ বই, ইসলামী চিকিৎসা
অনুবাদ: হাফেয মাহমুদুল হাসান
পৃষ্ঠা ৯৭
পকেট সাইজ

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.