উৎসর্গ
প্রিয় শিশু! প্রিয় কিশাের!
প্রিয় নবীন! জানি, তুমি গল্প-প্রেমিক! আরাে জানি, পাশাপাশি তুমি ভীষণ অসহায়! কেননা, বাঘ-ভল্লুক-শৃগাল-বিড়াল ও ভূত-পেত্নীর জীবাণুযুক্ত গল্প-কাহিনী ছাড়া পড়ার মতাে তেমন কিছুই তােমার হাতের নাগালে পাচ্ছে না। গঠনমুখী, জীবন-বদলানাে শিশু-সাহিত্যের অনুপস্থিতিতে এইসবই কিলবিল করছে তােমার চারপাশে। কখনও ‘বিষ’ ঢেলে দিচ্ছে তােমার মাঝে! তােমার অজান্তে। তােমার অভিভাবকের অজান্তে, এ জন্যে দায়ী তুমি না– দায়ী আমরা। বন্ধু, এ দায়বােধ থেকেই গল্পে আঁকা সীরাত' এর জন্ম।
তােমার জন্যেই এর জন্ম! তােমার জন্যেই তা নিবেদিত। এই যে শােনাে, গল্পে আঁকা সীরাত তােমাকে ডাকছে! এসাে, হাতে তুলে নাও আদর করে। বুকে চেপে ধরাে কিছুক্ষণ, পড়ার আগে। তারপর বলে ওঠো পেয়েছি! এখন গল্পে গল্পে আমার নবীকে আমি ভালােবাসবাে গভীর ভালােবাসা!
ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী
সূচীপত্র
আমার পরিচয় / ০৫
আমি আবরাহার হাতি / ০৮
আমি মা হালিমার সেই বাহন/ ২১
আমি কালাে পাথর বলছি/ ৩৪
একটি রাতের আত্মকাহিনী / ৪১
আমি এক থােকা আঙুর / ৪৯
আমি ‘জামাল’ বলছি/ ৬২
আমি বােরাক বলছি/ ৭৩
আমি সাপ / ৮২
আমি কবুতর বলছি/ ৮৯
আমি ঘােড়া / ৯৬
আমি সেই বকরী / ১০৩
আমি ‘কাসওয়া/১১০ আমি ‘বদর’ বলছি/ ১২০
আমি ওহুদ পাহাড়/১৩০
আমি একটি পাথরখণ্ড / ১৪১
আমি বকরী বলছি/ ১৪৯
আমি সেই খেজুর গাছ/১৫৭
আমি রিদওয়ান বৃক্ষ/ ১৬৪
আমি স্বর্ণমুদ্রা বলছি/১৭৩
আমি ইসলামের পতাকা / ১৮৪
পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণের।
ভূমিকা
আলহামদু লিল্লাহ। গল্পে আঁকা সীরাত-এর নতুন সংস্করণ
বের হচ্ছে মাকতাবাতুল হাসান থেকে। অধীর পাঠকের অস্থিরতা আশা করি এখন দূর হয়ে যাবে। অনেকদিন থেকেই শুনতে হচ্ছিলাে
ও বন্ধুদের অভিযােগ-অনুযােগ। অসংখ্য ফোন এসেছে। চাহিদা এসেছে।
আবেদন এসেছে। বার বার বলেছি, শিগগির আসছে নতুন সংস্করণ। একটু অপেক্ষা।
কিন্তু এভাবে কতাে আর বলা যায়!
| এখন বেশ স্বস্তি অনুভব হচ্ছে। মনের মধ্যে ছােট্ট একটা কালাে আস্তরণ জমে ছিলাে প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিয়ে পূরণ করতে
# না-পারার কারণে। এখন এই কালাে আস্তরণটা আর নেই। মন থেকে মুছে গেছে। আলহামদু লিল্লাহ। মাকতাবাতুল হাসানকে অসংখ্য ধন্যবাদ বইটিকে নতুনরূপে প্রকাশ করার জন্যে। এখন আশা করি আরাে ব্যাপকভাবে
বইটি ছড়িয়ে পড়বে। পৌঁছে যাবে সীরাত-বন্ধু শিশু-কিশােরদের
নয় হাতে হাতে।
ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী
আমার পরিচয়
আমি একটি বই। বই হতে পেরে আমি খুশি, খু-উ-ব খুশি। আমার বিশ্বাস; এ পৃথিবীতে আমি দামী, অনে-ক দামী। আমার পাতাগুলাে মূল্যবান, অনেক মূল্যবান। টাকা-পয়সা, সােনাদানা, রাজ-রাজড়াদের আলিশান বালাখানা এমনকি সারা পৃথিবীর রত্নভাণ্ডার থেকেও আমি অনেক দামী। বলতে পারাে, কেননা আমি এতাে দামী? কেনাে আমার এতাে মূল্য? সে কথা বলতেই তােমাদের সামনে হাজির হয়েছি! শােনাে, আমি মূল্যবান তিন কারণে
এক. আল্লাহ মানুষের হিদায়াতের জন্যে কী পাঠিয়েছেন? কিতাব আসমানী কিতাব। যেমন তাওরাত একটি আসমানী কিতাব, ইঞ্জিল একটি আসমানী কিতাব, যাবুর একটি আসমানী কিতাব এবং আমাদের কুরআন একটি আসমানী কিতাব। সেই সব মহান আসমানী কিতাবকে যেমন ‘কিতাব’ বলা হয়, আমাকেও মানুষ ‘কিতাব’ বলে! আসমানী হওয়ার মহিমা আমার ভাগ্যে জোটে নি, কিন্তু নাম-অবয়বের এ-সাদৃশ্যটুকু তাে জুটেছে! এ-ই বা কম কিসে? অন্য আমি ধন্য!
দ্বিতীয় কারণ হলাে, কুরআন নাযিল হয়েছে যার প্রতি আমি রচিত সেই মহামানবকে নিয়ে, সেই আল-আমীনকে নিয়ে, মরু-মক্কার সেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে, আল্লাহ যাকে এ-পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সবার হিদায়াতের জন্যে। সবাইকে সত্য ও কল্যাণের পথে এবং ভালােবাসা ও শান্তির পথে ডাকার
জন্যে। দুনিয়ার কাঁটাবন থেকে উদ্ধার করে আখেরাতের ‘ফুলবন’-এর সন্ধান দেয়ার জন্যে। আমার গুরুত্বের অন্য সব কারণ বাদ দিলেও শুধু এ কারণেই তাে আমি গর্ব করতে পারি নিজেকে নিয়ে ঈর্ষণীয় গর্ব! ধন্য আমি ধন্য!!
আমার গুরুত্বের তৃতীয় কারণ বলি এখন শােননা, আমি কচিকাঁচা ও সােনামণিদের জন্যে রচিত! ওরা আমার খুব প্রিয়! প্রিয় তাে হবেই! ওরা-যে পবিত্র, চিরসুন্দর! যেনাে শিশির-ধােওয়া ফুল, কিংবা তার মিষ্টি মধুর স্নিগ্ধ হাসি! ওরা আল্লাহর কাছেও প্রিয়, আল্লাহর কাছে যিনি প্রিয়, সেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছেও প্রিয়। তাই আমার কাছেও প্রিয়! অনেক প্রিয়!! সব মিলিয়ে সত্যি ধন্য আমি ধন্য!!
আমার পাতায় পাতায় বর্ণিত হয়েছে যে সব ঘটনা ও কাহিনী, তা আগাগােড়াই সত্য। যদিও তা উচ্চারিত হয়েছে বিভিন্ন প্রাণী ও বস্তুর যবানিতে (ভাষায়)। আর আমার কচিকাঁচা বন্ধুরা তাে ওদের মুখে গল্প শুনতেই বেশি পছন্দ করে, নয় কি? আবার বলছি; আমাকে সাজানাে হয়েছে কুরআন-হাদীসসহ বিভিন্ন সীরাগ্রন্থ মন্ত্রণ করে— নতুন ভাষায় .. নতুন ধারায় .. নতুন ভঙিতে.. নতুন উপস্থাপনায়। আমার বিশ্বাস; কচিকাচা ও শিশু-কিশোের বন্ধুরা খুব মজা করে ও গুরুত্ব দিয়ে আমাকে পড়বে এবং পড়তে পড়তে আনন্দ-বিহ্বল হয়ে পড়বে। আমার ভয়, ওরা আবার নাওয়া-খাওয়া ভুলেইনা যায়!
আমি বিশ্বাস করি, আমার বন্ধুরা এ-বই একবার পড়লে আবার পড়তে চাইবে। বার বার পড়তে চাইবে, পড়তে বাধ্য হবে। কেননা এ বইয়ে ছড়িয়ে আছে আকর্ষণ, বিপুল আকর্ষণ! আমি আরাে বিশ্বাস করি, এ-বই পড়লে প্রিয় নবীজীকে ওরা ভালােবাসবে— হৃদয়-মন উজাড় করে! বাসবেই!! আর এ ভালােবাসার ‘সােনার তরীতে চড়েই ওরা পার হয়ে যাবে এই দুনিয়ার জীবনের সব সাগর মহাসাগর একেবারে নির্বিঘ্নে, নিঝঞ্জায়, হােক তা যতােই তরঙ্গ-বিক্ষুব্ধ ও ফেনিলােত্তাল। আর ওপারে, মানে আখেরাতে এ-ভালােবাসার ‘বুরাকে চড়েই দাঁড়াবে গিয়ে ওরা একেবারে হাউযে কাউসারের পাড়ে প্রিয় নবীজীর কাছটি ঘেঁষে, তাঁকে ভালােবাসার অধিকার নিয়ে!! আহা! সে হবে কী মধুলগ্ন! হােক তা আমাদের সবার মধুস্বপ্ন!!
হ্যাঁ.. বিদায়ের আগে আরেকটা কথা না বললেই নয়! আমাকে আরবী রূপ দিয়েছেন আরব জাহানের ইসলামী শিশু-সাহিত্যের তারকা-লেখক আবদুত তাওয়াব ইউসুফ। আর বাংলা রূপ দিয়েছেন ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী। তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ। ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভীকে আলাদা করে আবারও ধন্যবাদ। কেননা বাংলাভাষীদের হাতে তিনিই আমাকে এই প্রথম তুলে দিয়েছেন। এ সুবাদে এখন কতাে বন্ধু হবে আমার! আমার জন্য এ এক বিরাট সৌভাগ্য। আরব বিশ্বে আমার বন্ধু সংখ্যা কতাে, জানাে? অনেক! সত্তর লাখ! অর্থাৎ সত্তর লাখ পাঠকবন্ধুর হাতে আমি পৌঁছে গেছি এখন পর্যন্ত! এখন মনে হয়—আরাে বেশি হবে এ সংখ্যা। আশাকরি, বাংলাভাষার প্রিয় পাঠকরাও আমার বন্ধু হবে এখন একে একে, অনেক! হে আল্লাহ! লেখক ও অনুবাদকের পরিশ্রম ও সাধনা তুমি কবুল করাে, তাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করাে। আমীন! এখন শুরু হয়ে যাক তাহলে উল্টাতে থাকো আমার পৃষ্ঠাগুলাে, একের পর এক! কুড়াতে থাকোফুল—নবুওত উদ্যান থেকে, একের পর এক! গাঁথতে থাকো মালা .. সাজাতে থাকো জীবন আমার তােমার সবার, একের পর এক!
লেখক : আবদুত তাওয়াব ইউসুফ। আবদুত তাওয়াব ইউসুফ। আরব জাহানের তারকা। লেখক । শিশু সাহিতের নন্দিত স্রষ্টা। সফল পথিকৃত। জন্ম মিসরে । ১৯২৮ সালের ১লা অক্টোবর আবু সুআইফ জেলার ফান শহরের শেনরা গ্রামে। কায়রাে বিশ্ববিদালয়ে পড়াশােনা করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে। কাজ করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিশুদের জন্যে । সাংবাদিকতার সবুজ উদ্যানেও ছিলাে তার আদর্শিক বিচরণ। বের করেছেন শিশুতােষ পত্রিকা আল ফিরদাউস। সমকালিন মিডিয়াতেও ছিলাে শিশুকিশােরদের স্বার্থে তার সরব উপস্থিতি। ১৯৭৫ সালে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিয়ে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন শুধু লেখায় । তখনই জন্ম নিয়েছে শিশু সাহিত্যের এই মহাভাণ্ডার। শিশুদের জন্যে লিখেছেন অবিরাম শিশুকিশাের আবেগের সিড়ি বেয়ে বেয়ে। তাঁর লেখা শিশুতােষ গ্রন্থের সংখ্যাটা চমকে ওঠার মতােই ৫৯৫! শিশুদের জন্যে লিখতে লিখতে যে চূড়ায় তিনি পৌছে গেছেন, সে চূড়াটা সত্যি ঈর্ষণীয় উচ্চতায় অধিষ্ঠিত। পারবে কি ওই উচ্চতায় কেউ পৌছতে? গল্পে আঁকা সীরাত আমাদের আলােচ্য গ্রন্থ গল্পে আঁকা সীরাত তাঁর অনন্য সৃষ্টি। পাঠকনন্দিত সেরা বই। এর বিক্রিসংখ্যা ৭০ লক্ষ কপির সীমানা স্পর্শ করেছে সেই ২০০৫ সালেই। আবদুত তাওয়াব ইউসুফের ভাষা ও ভঙ্গি হৃদয়-ছোঁয়া। নিজের লেখা সম্পর্কে এক জায়গায় বলেছেন ‘আমি আমার লেখায়-বলায় শিশুকিশােরদেরকে ইসলামের আকৃিদার উপর গড়ে তােলার চেষ্টা করেছি। আমি ওদের কাছে পবিত্র কুরআনকে প্রিয় করে তুলতে চেয়েছি । তাঁর লেখা কয়েকটি বইয়ের নাম : গল্পে আঁকা সীরাত (বিক্রয়ের শীর্ষে), ইসলামের রুকন সিরিজ, নবীদের মু'জিযা সিরিজ, এসাে সংস্কৃতি শিখি, মিষ্টি সফর ও ফিলিস্তিনের বীরত্বগাথা। ৮৭ বছর বয়সে ২৮শে আগস্ট ২০১৫ সালে জোহরের পর আমাদেরকে ছেড়ে তিনি চলে গেছেন না-ফেরার দেশে!
ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।
লেখক : ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল হাসান
বিষয় : শিশু কিশোরদের বই