Notification texts go here Contact Us Buy Now!

জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত – মুযাফফর বিন মুহসিন pdf download

Author
Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated

 



উক্ত গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা – প্রথম অংশ


আমলের মাধ্যমে ব্যক্তি পরিচয় ফুটে উঠে ও আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। সৎ আমল করা একজন মুসলিম ব্যক্তির প্রধান দায়িত্ব। আর সেজন্যই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ আমলের বিশুদ্ধতা যাচাইয়ের প্রয়োজন মনে করে না। যে আমল সমাজে চালু আছে সেটাই করে থাকে। এমনকি আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম ছালাতের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। অথচ সমাজে প্রচলিত ছালাতের হুকুম-আহকাম অধিকাংশই ত্রুটিপূর্ণ। ওযূ, তায়াম্মুম, ছালাতের ওয়াক্ত, আযান, ইক্বামত, ফরয, নফল, বিতর, তাহাজ্জুদ, তারাবীহ, জুম‘আ, জানাযা ও ঈদের ছালাত সবই বিদ‘আত মিশ্রিত এবং যঈফ ও জাল হাদীছে আক্রান্ত। ফলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাতের সাথে আমাদের ছালাতের কোন মিল নেই। বিশেষ করে জাল ও যঈফ হাদীছের করালগ্রাসে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত সমাজ থেকে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। ফলে সমাজ জীবনে প্রচলিত ছালাতের কোন প্রভাব নেই। নিয়মিত মুছল্লী হওয়া সত্ত্বেও অনেকে নানা অবৈধ কর্মকান্ড ও দুর্নীতির সাথে জড়িত।

সমাজে মসজিদ ও মুছল্লীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সূদ-ঘুষ, চুরি-ডাকাতি, যুলুম-নির্যাতন, রাহাজানি কমছে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা হল, ‘নিশ্চয়ই ছালাত অন্যায় ও অশ্লীল কর্ম থেকে বিরত রাখে’ (সূরা আনকাবূত ৪৫)। অতএব মুছল্লীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে যাবতীয় অন্যায়-অপকর্ম বন্ধ হবে, নিঃসন্দেহে কমে যাবে এটাই আল্লাহর দাবী। কিন্তু সমাজে প্রচলিত ছালাতের কোন কার্যকারিতা নেই কেন? এ জন্য মৌলিক তিনটি কারণ চিহ্নিত করা যায়।

(এক) খুলূছিয়াতে ত্রুটি রয়েছে। অর্থাৎ ছালাত আদায় করি কিন্তু একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে তা পেশ করি না। অধিকাংশ মুছল্লী মসজিদেও সিজদা করে মাযারেও সিজদা করে, রাসূল (ছাঃ)-কেও সম্মান করে পীরেরও পূজা করে, ইসলামকেও মানে অন্যান্য তরীক্বা ও বিজাতীয় মতবাদেরও অনুসরণ করে। এই আক্বীদায় ছালাত আদায় করলে ছালাত হবে না। একনিষ্ঠচিত্তে একমাত্র আল্লাহর জন্যই সবকিছু করতে হবে, তাঁরই আইন ও বিধান মানতে হবে।[1]

(দুই) রাসূল (ছাঃ)-এর পদ্ধতিতে ছালাত আদায় না করা। অধিকাংশ মুছল্লীই তার ছালাত সম্পর্কে উদাসীন। তিনি যত জ্ঞানী ও বুদ্ধিমানই হোন লক্ষ্য করেন না, তার ছালাত রাসূল (ছাঃ)-এর তরীক্বায় হচ্ছে কি-না। অথচ ছালাতের প্রধান শর্তই হল, রাসূল (ছাঃ) যেভাবে ছালাত আদায় করেছেন ঠিক সেভাবেই আদায় করা।[2] এ ব্যাপারে শরী‘আতের নির্দেশ অত্যন্ত কঠোর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সুতরাং দুর্ভোগ ঐ সমস্ত মুছল্লীদের জন্য, যারা ছালাতের ব্যাপারে উদাসীন, যারা লোক দেখানোর জন্য আদায় করে’ (মাঊন ৪-৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের মাঠে বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে ছালাতের। ছালাতের হিসাব শুদ্ধ হলে তার সমস্ত আমলই সঠিক হবে আর ছালাতের হিসাব ঠিক না হলে, তার সমস্ত আমল বরবাদ হবে’।[3]

জনৈক ছাহাবী রাসূল (ছাঃ)-এর উপস্থিতিতে তিনবার ছালাত আদায় করেন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তিনবারই তাকে বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং ছালাত আদায় কর, তুমি ছালাত আদায় করোনি।[4] ঐ ব্যক্তি তিন তিনবার অতি সাবধানে ছালাত আদায় করেও রাসূল (ছাঃ)-এর পদ্ধতি মোতাবেক না হওয়ায় তা ছালাত বলে গণ্য হয়নি। উক্ত হাদীছ থেকে বুঝা যায় যে, রাসূল (ছাঃ)-এর তরীক্বায় ছালাত আদায় না করলে কা‘বা ঘরে ছালাত আদায় করেও কোন লাভ নেই। তাঁর ছাহাবী হলেও ছালাত হবে না। অন্য হাদীছে এসেছে, হুযায়ফাহ (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে ছালাতে রুকূ-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করতে না দেখে ছালাত শেষে তাকে ডেকে বললেন, তুমি ছালাত আদায় করনি। যদি তুমি এই অবস্থায় মারা যাও, তাহলে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে যে ফিতরাতের উপর আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সেই ফিতরাতের বাইরে মারা যাবে।[5] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হুযায়ফা (রাঃ) তাকে প্রশ্ন করলে বলে, সে প্রায় ৪০ বছর যাবৎ ছালাত আদায় করছে। তখন তিনি উক্ত মন্তব্য করেন।[6] অতএব বছরের পর বছর ছালাত আদায় করেও কোন লাভ হবে না, যদি তা রাসূল (ছাঃ)-এর পদ্ধতি মোতাবেক না হয়।

(তিন) হারাম উপার্জন। ‘হালাল রূযী ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত’ কথাটি সমাজে প্রচলিত থাকলেও এর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রত্যেককে লক্ষ্য করা উচিৎ তার খাদ্য, পানীয়, পোশাক, আসবাবপত্র হালাল না হারাম। কারণ হারাম মিশ্রিত কোন ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র বস্ত্ত ছাড়া কবুল করেন না’।কারো খাদ্য, পানীয় ও পোশাক হারাম হলে তার প্রার্থনা গ্রহণযোগ্য হবে না।[7] তাই দুর্নীতি, আত্মসাৎ, প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ এবং সূদ-ঘুষ, জুয়া-লটারী ও অবৈধ পন্থায় প্রাপ্ত অর্থ ভক্ষণ করে ইবাদত করলে কোন লাভ হবে না।

মুছল্লী উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন না হওয়ার কারণে ছালাত যেমন পরিশুদ্ধ হয় না, তেমনি মুছল্লীর মাঝে একাগ্রতা ও মনোযোগ আসে না। ফলে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ছালাতের কার্যকর কোন প্রভাবও পড়ে না।

অতএব আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে এমন ছালাত আদায় করতে চাইলে ছালাতকে অবশ্যই পরিশুদ্ধ করতে হবে এবং একমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর দেখানো পদ্ধতিতেই আদায় করতে হবে। অন্য সব পদ্ধতি বর্জন করতে হবে। কারণ অন্য কোন তরীক্বায় ছালাত আদায় করলে কখনোই একাগ্রতা ও খুশূ-খুযূ সৃষ্টি হবে না। আর আল্লাহভীতি ও একনিষ্ঠতা স্থান না পেলে মুছল্লী পাপাচার থেকে মুক্ত হতে পারবে না (সূরা বাক্বারাহ ২৩৮; মুমিনূন ২)। মনে রাখতে হবে যে, এই ছালাত যদি দুনিয়াবী জীবনে কোন প্রভাব না ফেলে, তাহলে পরকালীন জীবনে কখনোই প্রভাব ফেলতে পারবে না। তাই দলীয় গোঁড়ামী, মাযহাবী ভেদাভেদ, তরীক্বার বিভক্তিকে পিছনে ফেলে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতের পদ্ধতি অাঁকড়ে ধরতে হবে। ফলে সকল মুছল্লী একই নীতিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছালাত আদায়ের সুযোগ পাবে। পুনরায় মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। ছালাতের মাধ্যমেই সমাজ দুর্নীতি মুক্ত হবে। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে শান্তির ফল্গুধারা প্রবাহিত হবে।

চরম দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, দেশে প্রচলিত ইসলামী দলগুলো সমাজের সংস্কার কামনা করে এবং এ জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করে থাকে। কিন্তু তাদের মাঝে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত নেই। মাযহাব ও তরীক্বার নামে যে ছালাত প্রচলিত আছে, সেই ছালাতই তারা আদায় করে যাচ্ছে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসাবে তারা যদি নিজেদের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে মাযহাবী গোঁড়ামীর উপর রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শকে প্রাধান্য দিতে না পারেন, তাহলে জাতীয় জীবনে তারা কিভাবে ইসলামের শাসন কায়েম করবেন? বিশেষ করে রাসূল (ছাঃ)-এর তরীক্বায় ছালাত আদায় করতে তো সামাজিক ও প্রশাসনিক কোন বাধা নেই। তাহলে মূল কারণ কী? মাযহাবী আক্বীদা ও মায়াবন্ধনই মূল কারণ।

এক্ষণে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত প্রতিষ্ঠার জন্য কিভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সে সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন। আমাদের একান্ত বিশ্বাস নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করলে ইনশাআল্লাহ কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাওয়া যাবে।

(ক) সম্মানিত ইমাম, খত্বীব ও আলেমগণ। সাধারণ মানুষকে সংশোধনের দায়িত্ব মূলতঃ তাদের উপরই অর্পিত হয়েছে। তাই তারা ছালাতের সঠিক পদ্ধতি জেনে মুছল্লীদেরকে বাস্তব প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন। প্রয়োজনে জুম‘আর দিন মিম্বরে দাঁড়িয়ে ছালাত শিক্ষা দিবেন।[8] তবে অনেক হক্বপন্থী আলেম সঠিক বিষয়টি জানা সত্ত্বেও সামাজিক মর্যাদার কারণে প্রকাশ করেন না। তারা কি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোকে ভয় পান না (রহমান ৪৬; নাযিয়াত ৪০)? তাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, যাবতীয় সম্মানের মালিক আল্লাহ (আলে ইমরান ২৬; নিসা ১৩৯)। অতএব তারা উক্ত দায়িত্বে অবহেলা করলে মুছল্লীদের ভুল ছালাতের পাপের ভার ক্বিয়ামতের দিন তাদেরকেও বহন করতে হবে।[9] আর যদি গোঁড়ামী করে জাল, যঈফ ও ভিত্তিহীন-বানোয়াট হাদীছ কিংবা বিদ‘আতী পদ্ধতিতে ছালাত শিক্ষা দেন এবং রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাতকে অবজ্ঞা করেন তবে তাদের শাস্তি আরো কঠোর হবে।[10] উক্ত ইমাম, খত্বীব ও আলেমগণ যেন আল্লাহকে ভয় করেন। আল্লাহ তাদের অন্তরের খবর রাখেন (হূদ ৫)।

(খ) দ্বীনের দাঈ, মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবারের অভিভাবকগণ। যে সমস্ত দাঈ সমাজের সর্বস্তরে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনা করেন, আলোচনা, বক্তব্য, সেমিনার, সম্মেলন, জালসা ইত্যাদি করে থাকেন, তারা আক্বীদা সংশোধনের দাওয়াত প্রদান করার পর বিশুদ্ধভাবে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব আলোচনা করবেন এবং তার পদ্ধতি তুলে ধরবেন।[11] তারা যদি ছহীহ দলীল ছাড়া দাওয়াতী কাজ করেন তবে তা হবে জাহেলিয়াতের দাওয়াত, যার পরিণাম অত্যন্ত ভায়াবহ।[12] মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যদি এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেন, তবে সমাজে দ্রুত এর প্রভাব পড়বে। কারণ তারা কিতাব দেখে, পর্যালোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত পেশ করতে পারবেন।[13] অনুরূপ পরিবারের অভিভাবকগণ যদি তাদের সন্তানদেরকে শুরুতেই রাসূল (ছাঃ)-এর তরীক্বায় ছালাত শিক্ষা দেন, তবে সমাজ থেকে প্রচলিত বিদ‘আতী ছালাত দ্রুত বিদায় নিবে এবং রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ সন্তানদেরকে ছালাত শিক্ষা দেয়ার মূল দায়িত্ব অভিভাবকের।[14] পক্ষান্তরে তারা যদি অবহেলা করেন এবং বিদ‘আতী ছালাতকেই চালু রাখেন, তবে তারাও আল্লাহর কাছে মুক্তি পাবেন না। তাদের সন্তানেরা উল্টা তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করবে (আহযাব ৬৭-৬৮; ফুছি্ছলাত ২৯)।

(গ) সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত জ্ঞানী-গুণী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, কলেজের শিক্ষক ও বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত অনেক জ্ঞানী ব্যক্তিও ছালাত আদায় করেন। প্রশাসনিক ব্যক্তি হিসাবে বিচারপতি, ম্যাজিস্ট্রেট, সচিব, ডিসি, এসপি, ওসি এবং জনপ্রতিনিধি হিসাবে মন্ত্রী, এমপি, চেয়ারম্যান, পরিচালক, সভাপতি, দায়িত্বশীল বিভিন্ন শ্রেণীর অনেকেই ছালাত আদায় করেন। তারা নিজেদের ছালাত যাচাই করে আদায় করলে সমাজ উপকৃত হয়। কারণ সাধারণ জনগণ তাদের প্রতি দৃষ্টি রাখে। তারাও মসজিদের ইমামকে বা অন্যান্য মুছল্লীদেরকে ছহীহ হাদীছ মোতাবেক ছালাত আদায়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। ছালাত যেহেতু অন্যায়-অশ্লীল কর্ম থেকে বিরত রাখে, তাই বিশুদ্ধ ছালাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিতে পারেন। কিন্তু অশনিসংকেত হল, এই শ্রেণীর অধিকাংশ মানুষই সমাজে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে শিরক ও বিদ‘আতের পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকেন। এটা কখনোই কাম্য হতে পারে না। পৃথিবীতে যে যে শ্রেণীরই মানুষ হোন না কেন আল্লাহর কাছে তাক্বওয়া ছাড়া কোনকিছুর মূল্য নেই।[15] অতএব তারা যদি ক্ষমতা ও দম্ভের কারণে ছহীহ হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করেন, তবে তাদেরকেও নমরূদ, আযর, ফেরআউন, হামান, কারূণ ও আবু জাহলদের ভাগ্যবরণ করতে হবে। ইবরাহীম (আঃ)-এর পিতা আযরের জন্য সুপারিশ করলেও আল্লাহ কবুল করবেন না। বরং তাঁর সামনে আযরকে পশুতে পরিণত করা হবে, নর্দমায় ডুবানো হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[16] কারণ ইবরাহীম (আঃ) তাকে অহির দাওয়াত দিয়েছিলেন কিন্তু সে দাপট দেখিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিল (মারইয়াম ৪২-৪৬)। তারা বহু বছর রাজত্ব করেও চরম অপমান ও লাঞ্ছনা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। বর্তমান নেতারা স্বল্প সময়ের ক্ষমতা পেয়ে দাপট দেখাতে চান। কিন্তু পূর্ববর্তীদের কথা এতটুকুও চিন্তা করেন না। বর্তমানে বিভিন্ন সমাজে ও মসজিদে সমাজপতিদের দাপটে অসংখ্য বিদ‘আত চালু আছে। অতএব ক্ষমতাশীনরা সাবধান!

(ঘ) তরুণ ছাত্র ও যুব সমাজ। তারুণ্যের ঢেউ ও যৌবনের উদ্যমকে যে আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে পরিচালনা করবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের মাঠে তাঁর আরশের নীচে ছায়া দান করবেন।[17] সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হল ছালাত। তারা উন্মুক্ত ও স্বাধীনচেতা কাফেলা হিসাবে যদি যাচাই সাপেক্ষে খোলা মনে ছালাতের সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করে তবে সমাজ সংস্কার দ্রুত সম্ভব হবে। বরং যারা নেতৃত্বের আসনে বসে প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখিয়ে সুন্নাত বিরোধী আমল চালু রাখতে চায়, তাদেরকেও তারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু যে সমস্ত ছাত্র ও যুবক বিদ‘আতী ছালাতে অভ্যস্ত থাকে এবং ছালাতকে যাচাই না করে তবে তাদের মত হতভাগা আর কেউ নেই। কারণ তারা এর জবাব না দেয়া পর্যন্ত ক্বিয়ামতের মাঠে পার পাবে না।[18]

(ঙ) গ্রন্থকার, লেখক, কলামিষ্ট, প্রাবন্ধিক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী। তাদের মধ্যেও অনেকে ছালাতে অভ্যস্ত এবং দ্বীনদার তাক্বওয়াশীল মানুষ আছে। সমাজে তাদের যেমন মর্যাদা আছে তেমনি ব্যক্তি প্রভাবও আছে। রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তারাও অবদান রাখতে পারেন। কিন্তু তারা যদি নিজেদের ছালাত বিশুদ্ধভাবে আদায় না করেন, তবে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অন্যদেরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। কারণ সমাজে তারা শ্রদ্ধার পাত্র। মানুষ তাদেরকে অনুসরণ করে। তাই তাদের দায়িত্বও বেশী। তারা নিজেদের পেশার ব্যাপারে যতটা সচেতন ও তথ্য উদ্ঘাটনে যতটা অনুসন্ধানী, বিশুদ্ধভাবে ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ততটা অনুরাগী নন। অথচ এটা চিরস্থায়ী আর অন্যান্য বিষয় ক্ষণস্থায়ী।

জাল-যঈফ হাদীছ মিশ্রিত প্রচলিত ছালাত উঠিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত প্রতিষ্ঠা করা নিঃসন্দেহে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে নিম্নের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিলে ইনশাআল্লাহ মাযহাবী গোঁড়ামী ও প্রাচীন ধ্যান-ধারণা পরিত্যাগ করা সহজ হবে।

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.