Notification texts go here Contact Us Buy Now!

ম্যাসেজ : আধুনিক মননে দ্বীনের ছোঁয়া

Author
Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated

 



ম্যাসেজ

লেখকের কথা

সমস্ত প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্যই নিবেদিত, যার অপার করুণায় সকল ভালাে কাজ পূর্ণতা পায়। দরুদ ও সালাম প্রিয়নবি মুহাম্মাদ এ-এর প্রতি, যিনি সত্যের বাণী সর্বত্র পৌছে দিতে আমাদের আহ্বান করেছেন। ২০২১ সালের বইমেলায় ‘ম্যাসেজ : আধুনিক মননে দ্বীনের ছোঁয়া’ শিরােনামে প্রকাশিত বইটি বাংলা ভাষায় আমার প্রথম কাজ। নিজেকে বাংলা সাহিত্য-দুনিয়ায় যুক্ত করতে পেরে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। আমি ক্ষুদ্র মানুষ। জ্ঞান-দুনিয়ার দুর্বল ছাত্র। প্রতি মুহূর্তে নিত্য-নতুন কিছু জানার চেষ্টা করছি। সত্যের অনুপম ছোঁয়ায় নিজেকে ঋদ্ধ করার অবিরত এক সংগ্রামে আছি। তীর পেরিয়ে জ্ঞান-সমুদ্রের যত গভীরে প্রবেশ করছি, নিজেকে তত দুর্বল, অসহায়, অন্তঃসারশূন্য ও ক্ষুদ্র হিসেবে আবিষ্কার করছি। রবের দুনিয়া কত বড়াে, তাঁর কত নিয়ামতে ডুবে আছি আমরা! পৃথিবীর প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে।

জ্ঞানের মণি-মুক্তা, রত্ন! কটা ভাজেই আর বিচরণ করা যায়! নিজের সীমাবদ্ধতা জানা সত্ত্বেও উম্মাহর তরুণদের নিয়ে কেন জানি পেরেশানিতে ভুগি। একুশ শতকের তারুণ্য কী এক মরীচিকার পেছনে ছুটছে! এই প্রজন্মেরই একজন হয়ে খুব করে তাদের মানসপটকে বােঝার চেষ্টা করি। তাদের লাইফস্টাইল, চিন্তাধারা ও কর্মত্তপরতা বেশ বুঝতে পারি। তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, কথার টোন, মনস্তাত্ত্বিক অবস্থানকে উপলব্ধি করতে পারি। মূলত, আমার ক্ষুদ্র কর্মতৎপরতা এই তরুণদের ঘিরেই। তাদের জন্য ভাবি, বলি, লিখি, কন্টেন্ট তৈরি করি। কারণ, এই প্রজন্মকে যদি সঠিক পরিবহনে তুলে দেওয়া যায়, তাহলে সঠিক গন্তব্যে পৌছবেই। ভুল গাড়িতে উঠিয়ে হা-হুতাশ করে কী লাভ! দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কুরআনের ম্যাসেজ পৌছে দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল রাব্দুল আলামিনের দয়ায়। একজন দাঈ হিসেবে সাধারণত কথা বলাটাই আমার স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা।

গত সাত বছরের দাওয়াতি অভিযাত্রায় অনেক শ্রোতা আমার লিখিত বইয়ের আবেদন করেছেন। আমি জেনেছি—শােনার পাশাপাশি শ্রোতাদের বড়াে একটা অংশ। পড়তে ভালােবাসেন। ইন্টেলেকচুয়াল সার্কেলে বই ও সাহিত্যের একটা আলাদা আবেদন আছে। সাহিত্যাঙ্গনে একজন দাঈ চাইলেই কিছু কন্ট্রিবিউট করতে পারেন।

দাওয়াহর সাহিত্যিক প্রেজেন্টেশনও বেশ কার্যকর ও টেকসই। লেখনী মানেই স্থায়ী রেকর্ড—এই ভাবনা থেকেই লেখালিখির আগ্রহটা তৈরি হয়। এই গ্রন্থে একেবারে ঐতিহাসিক ও এক্সকুসিভ কোনাে তথ্য হয়তাে পাবেন না; এ আমার জ্ঞানের ক্ষুদ্রতা। বলতে পারেন, কুরআনের কর্মী হিসেবে সাহিত্য-জগতে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা প্রচেষ্টা এই গ্রন্থ। সারা দেশে বিভিন্ন সময়ে আমি সুনির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে আলােচনা করেছি, গ্রন্থের প্রতিটি লেখায় সেসব আলােচনার নােটই প্রাথমিক সাের্স। বইটি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে উপলব্ধি করেছি, লেখার চেয়ে বলা অনেক সহজ। বইটিতে কুরআন-সুন্নাহর উদ্ধৃতি, সাহাবিদের বক্তব্য, সালাফদের কথা, বিভিন্ন শিক্ষণীয় ঘটনা, ক্লাসিক্যাল ও আধুনিক স্কলারদের রেফারেন্সের পাশাপাশি আমার নিজস্ব একান্ত কিছু চিন্তা-ভাবনা উপস্থাপিত হয়েছে। সাহিত্য-দুনিয়ায় বই মানেই যে শব্দের মারপ্যাচে ভারী ভারী কথা, এই গ্রন্থকে সেখান থেকে খানিকটা দূরে রাখার চেষ্টা করেছি। রাশভারী কথামালা পরিহার করে সাধারণ মানুষের ভাষায় লেখাগুলাে সাজানাের একটা প্রয়াস এখানে আছে। সকল ধর্ম, বয়স, শ্রেণি-পেশার পাঠক নিজেদের সাথে বইটিকে কানেক্ট করতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস। নতুন ধারার প্রতিশ্রুতিশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স’-কে পাশে পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। পুরাে গার্ডিয়ান টিম অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। গ্রন্থটিকে পাঠকদের সামনে স্মার্টলি উপস্থাপন করতে বেশ কিছু তরুণ দিন-রাত শ্রম দিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। প্রত্যেকের কল্যাণ কামনা করছি। মানুষ হিসেবে আমরা কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নই। এই বইটিতে কোনাে ভুল থাকবে

—এমন দাবি করার দুঃসাহস করছি না। মানবিক দুর্বলতার কারণে বিশেষ কোনাে টাইপিং মিসটেক অথবা তথ্যগত কোনাে অসংগতি আপনাদের চোখে পড়লে দয়া করে আমাদের জানাবেন; পরবর্তী সংস্করণে সেটা সংশােধন করে নেব, ইনশাআল্লাহ। বাংলাভাষী পাঠকদের নিকট ইসলামের সৌন্দর্য, মূল তাৎপর্য, স্পিরিট ও মধ্যমপন্থার শিক্ষা তুলে ধরতে বইটি কিছুটা হলেও অবদান রাখবে বলে আশা করছি। ম্যাসেজ বইটিতে কিছু বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আধুনিক মননে দ্বীনের ছোয়া লাগাতে বইটিকে আল্লাহ তায়ালা কবুল করুন। আমিন। মিজানুর রহমান আজহারি

৩০ মার্চ, ২০২১

সূচিপত্র

কুরআনের মা। 11

মুমিনের হাতিয়ার। 29

কুরআনিক শিষ্টাচার 48

উমর দারাজ দিল 80

ডাবল স্ট্যান্ডার্ড 103

উসরি ইউসরা : কষ্টের সাথে স্বস্তি 132

রেগে গেলেন তাে হেরে গেলেন। 156

শাশ্বত জীবনবিধান 173

স্মার্ট প্যারেন্টিং 201

মসজিদ : মুসলিম উম্মাহর নিউক্লিয়াস 230

ঐশী বরকতের চাবি 260

বিদায় বেলা 280

কুরআনের মা

সূরা ফাতিহা পবিত্র কালামুল্লাহ মাজিদের একটি তাৎপর্যপূর্ণ উদ্বোধনী বক্তব্য (Maiden Speech), একটি সার্থক মানপত্র, একটি প্রার্থনা, একটি শ্রেষ্ঠ সারাংশ এবং একটি প্রতিষেধক। অসংখ্য গুণে গুণান্বিত এই ছােট্ট সূরাটি কুরআনের প্রথম সূরা। এই সূরা দিয়েই কুরআনের সূচনা। আর ‘ফাতিহা’ শব্দের আক্ষরিক অর্থই হলাে—শুরু বা সূচনা। এই সূরাকে ‘ফাতিহাতুল কিতাব’ বা কিতাবের ভূমিকা হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এ সূরার মধ্য দিয়েই খুলে যায় কুরআনের বিস্ময়কর জগতের দ্বার! এই সূরার পথ পরিভ্রমণের মধ্য দিয়েই কুরআনের মহিমান্বিত রূপ আমাদের গােচরে আসে।

সূরা ফাতিহা মূলত একটি প্রার্থনা; যা মানুষের জীবনের পথ ও পাথেয় বর্ণনা করে। এই সূরার মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালা উম্মতে মুহাম্মাদিকে শিক্ষা দিয়েছেন প্রার্থনা করার পদ্ধতি। এই সূরায় অঙ্কিত হয়েছে মানবকুলের জন্য সহজ-সরল ও সঠিক জীবনপথের পূর্ণাঙ্গ চিত্র। এ সূরার ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে কুরআনের সামষ্টিক মহিমান্বিত রূপ, বর্ণিত হয়েছে তার সারমর্ম। বিচিত্র বিষয়ের অবতারণা হয়েছে এই সূরায়। মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল মিলে যেমন একটি পরিপূর্ণ উদ্ভিদ হয়, তেমনি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণের সমন্বয়ে সূরা ফাতিহা পরিপূর্ণতা লাভ করছে। এই রব শব্দের ছয়টি অর্থ রয়েছে

• আল মালিক : যিনি সমস্ত কিছুর মালিক।

• আস-সায়্যিদ : যিনি সবকিছুর ওপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব রাখেন।

• আল মুরাব্বি : যিনি সমস্ত কিছুর বৃদ্ধি ও পরিপকৃতা (Growth and Maturity) নিশ্চিত করেন।

• – আল মুরশিদ : যিনি সবকিছুর পথ দেখান।

• আল কাইয়্যিম : যিনি সবকিছুর অস্তিত্ব নিশ্চিত করেন।

• আল মুনয়িম : যিনি সমস্ত কিছু উপহার দান করেন।

রব শব্দের পুরাে অর্থ বুঝতে এই ছয়টি অর্থই আমাদের হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। এই অর্থগুলাে সামনে রাখলে বুঝতে পারব—আমরা যে রবের প্রশংসা করি, তিনি কে।

রব শব্দের একটা অর্থ—মালিক। এজন্য কোনাে বস্তুর মালিককে আরবি পরিভাষায় ‘রব্দুল মাল’ এবং বাড়ির মালিককে ‘রব্রুদ-দ্বার’ বলা হয়। মানুষ যাকে নিজের রিজিকদাতা ও প্রতিপালক বলে মনে করে, যার নিকট হতে মান-সম্মান, উন্নতি ও শান্তি লাভ করার আকাঙ্ক্ষা করে থাকে, মানুষ যাকে প্রভু, মনিব ও মালিকরূপে অবহিত করে এবং বাস্তবজীবনে যার আনুগত্য ও আদেশ পালন করে চলে, প্রকৃতার্থে তিনিই রব, প্রতিপালক। আমাদের যার যখন যেটা যতটুকু দরকার, তাকে তখন সেটা

চাইতেই যিনি ব্যবস্থা করে দেন, তিনিই হলেন রব। আমরা মায়ের গর্ভে থাকাকালীন আল্লাহর কাছে কিছুই চাইতে পারিনি; তবুও আল্লাহ তায়ালা সেখানে আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। এরপর যখন ভূমিষ্ঠ হলাম, ‘ওয়া’ ‘ওয়া’ শব্দে কান্না করা ছাড়া তখনও কিছু বলতে পারিনি। তবুও দয়াময় আল্লাহ মায়ের বুকের ভেতর আমাদের জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মায়ের বুকের দুধ খেয়ে আমরা ক্ষুধা নিবারণ করতাম। এই সময় আমাদের দাঁতের কোনাে দরকার ছিল না। ফলে আল্লাহ আমাদের দাঁত দেননি। এবার মানবশিশু কিছুটা বড়াে হতে লাগল। এখন ভাত, মাছ, মাংস এগুলাে চিবােতে হবে; অর্থাৎ দাঁতের প্রয়ােজন। ঠিক এই সময়টিতে আল্লাহ চাওয়ার আগেই ধীরে ধীরে মুখের মধ্যে দাঁত সেট করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!

মুমিনের হাতিয়ার

‘দুআ মাত্র দুই অক্ষরের একটি শব্দ। কিন্তু শব্দটির ক্ষমতার ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি পরিমাপ করা সত্যিই বড় কঠিন। এ যেন মালিক ও দাসের মধ্যে চাওয়া-পাওয়ার সেতু নির্মাণকারী এক কারিগর। একজন ক্ষুদ্র দাস আরশে আজিমের মালিকের কাছে। মিনতি করছে, ভিক্ষা মাঙছে আর মনিব উজার করে সব দিয়ে দিচ্ছেন—এ যেন ওয়ান টু ওয়ান বােঝাপড়া। কী দারুণ একটা ব্যাপার! সুবহানাল্লাহ। দআর মাধ্যমে আমরা মূলত আল্লাহর প্রতিটি নাম ও বিশেষত্বের স্বীকৃতি দিই। আমরা স্বীকৃতি দিই, তিনি আমাদের স্রষ্টা আর আমরা তাঁর অনুগত দাস। আমাদের লালনপালন, নিয়ন্ত্রণ সবকিছুই তার হাতে। আমাদের যাবতীয় কার্যকলাপ তিনি শুনছেন, দেখছেন। তিনি সর্বশক্তিমান। সবকিছুর ওপর তিনি ক্ষমতাবান। দুআ মানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ, উপাস্য হিসেবে তাঁর একক অধিকারের স্বীকৃতি। দুআ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বিশেষ উপহার। দুআ করা এবং দুআ চাওয়া দুটোই সুন্নাহ। দুআ একটি মহৎ ইবাদতও বটে। বিশ্বনবি বলেন—

‘আল্লাহর দৃষ্টিতে দুআর চেয়ে মহৎ কিছু নেই।’ (সহিহ বুখারি : ৫৩৯২) দুআ একটা আর্ট বা শিল্প। একে রপ্ত করতে হয়, আত্মস্থ করতে হয়। সব কাজের মধ্যে যেমন ফার্স্ট-ক্লাস, সেকেন্ড-ক্লাস, থার্ড-ক্লাস আছে, তেমনি দুআর মধ্যেও ফার্স্ট-ক্লাস, সেকেন্ড-ক্লাস, থার্ড-ক্লাস আছে। কেউ ফার্স্ট-ক্লাস দুআ করলে আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করে নেন। আর থার্ড-ক্লাস দুআ করলে সেই দুআ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এমন অনেক দুআকারী আছে—যাদের দুআয় কোনাে আবেগ ও ভাবাবেগ থাকে না। এ যেন রােবটিক দুআ-ফাঁপা, নিষ্প্রাণ; দুআ করার জন্য দুআ। এ রকম দুআ আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না।

দুআ করতে হবে আবেগ দিয়ে, যে আবেগ চোখের জলের বাঁধ ভেঙে দেবে। হৃদয়কে করবে নরম, উর্বর। বান্দার চোখের পানি আল্লাহ খুব পছন্দ করেন। অনুতপ্ত বান্দার

চোখের পানি নাকের ডগা বেয়ে মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহ তায়ালা তার দুআ কবুল করে নেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। দয়ার নবি বলেন‘দুই ধরনের ফোঁটা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এক. অনুতপ্ত বান্দার চোখের অশ্রুর ফোঁটা; দুই. জিহাদের ময়দানে শহিদের রক্তের ফোটা। (জামে আত-তিরমিজি : ১৬৬৯)

দুআর শক্তি দুআ মুমিনের অসাধারণ এক হাতিয়ার। দুনিয়ার সবকিছুর কারিশমা যেখানে শেষ, দুআর কারিশমা সেখান থেকেই শুরু। সব ক্ষমতা যেখানে অকার্যকর, দুআর ক্ষমতা সেখানেই কার্যকর। দুআর মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর কাছে ধরনা দেওয়া হয়। আর আল্লাহর দরবারে ‘না’ বলতে কিছু নেই; আছে শুধু ‘হা’। দুআর অসাধারণ কিছু শক্তি জেনে নেওয়া যাক। দুআ ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার : মানুষের তাকদিরে সাধারণত কোনাে পরিবর্তন হয়

। মহাবিশ্ব সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে আল্লাহ আমাদের তাকদির লিখে রেখেছেন, কিন্তু দুআর বদৌলতে তাকদিরও পরিবর্তন হতে পারে। ইংরেজিতে একটি felt pics’Everything is pre-written, but by supplication its re-written.’ বিশ্বনবি ও বলেন

‘দুআর বদৌলতে তাকদিরের কিছু অংশ বদলে যায়।’ (জামে তিরমিজি : ২১৩৯) আমরা প্রায় সময় শুনি, অমুক রােগীর ক্যানসার বেশিদিন বাঁচবে না। বাংলাদেশের সেরা ডাক্তার ঘােষণা দিয়েছেন, বাঁচলে সর্বোচ্চ ছয় মাস। কিন্তু দেখা যায়, সেই লােকটি আরও দশ বছর বেঁচে থাকে। এটা কীভাবে সম্ভব? কেবল দুআর বরকতেই সম্ভব হয়।

কুরআনিক শিষ্টাচার একবার বনু তামিম গােত্রের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের এক লােক এসে নবিজিকে ডাকা শুরু করল-“ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া মুহাম্মাদ’ বলে। নবিজিকে এভাবে আদবহীনভাবে ডাকাডাকি আল্লাহ পছন্দ করেননি। তাই আদব শিক্ষা দেওয়ার জন্য আল্লাহ রব্দুল ইজ্জত এই আয়াতটি নাজিল করলেন। (মুসনাদে আহমাদ : ৩/৪৪৮)

উমর দারাজ দিল

উমর -এর ‘ফিরাসাহ’ বা দিব্যদৃষ্টি একবার উমর , মসজিদে নববিতে জুমার খুতবা দেওয়ার সময় হুট করে বলে উঠলেন—“ইয়া সারিয়াতাল জাবাল অর্থাৎ “হে সারিয়া! পাহাড় অভিমুখে ছােটো। এই কথা তার বক্তব্যের আগের বাক্যের সাথেও মিল নেই, পরের বাক্যের সাথেও মিল নেই। নামাজের পর সবাই জিজ্ঞেস করলেন-‘আমিরুল মুমিনিন! হুট করে কেন আপনি এই কথাটি বললেন?

উমর (রা:) বললেন—খুতবা দেওয়ার সময় দেখলাম, মুসলিম বাহিনী প্রাণপণে যুদ্ধ করছে। মুসলিম বাহিনীর ডানে পাহাড়, বামে উপত্যকা। তারা পাহাড়ের দিকে না গিয়ে উপত্যকার দিকে রওয়ানা হলাে; অথচ ওদিকে শত্রুরা ওত পেতে আছে। তাই তাঁদের সাবধান করতে বললাম—উপত্যকার দিকে নয়; পাহাড়ের দিকে যাও।’ এ কথা শুনে অনেকেই অবাক হলেন। উমর ads আছেন মদিনায়। মদিনায় থেকে কীভাবে পারস্যে নির্দেশ করছেন? তখনকার সময়ে তাে মােবাইল ছিল না, ছিল না। আধুনিক যােগাযােগব্যবস্থা। তিনি কীভাবে এ কথা বললেন?

কিছুদিন পর ওই বাহিনী মদিনায় ফিরে এলাে। কয়েকজন তাদের জিজ্ঞেস করল-“অমুক দিন কি আপনারা এমন কোনাে আওয়াজ শুনেছিলেন? তারা বললেন-“হ্যা, আমরা আমিরুল মুমিনিনের আওয়াজ শুনেছিলাম। এর ফলে আল্লাহর রহমতে আমরা শত্রুর হাতে কচুকাটা হওয়া থেকে বেঁচে গেছি।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১৩৫ পৃষ্ঠা)

উমর (রা:)-এর ব্যক্তিত্ব উমর (রা:) এমন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ ছিলেন, তিনি যেই রাস্তা দিয়ে হাঁটতেন, শয়তান সেই রাস্তার আশেপাশেও থাকত না। মদিনার মুনাফিকরা তাঁকে যমের মতাে ভয় পেত। বাচ্চারা রাতে খেতে না চাইলে আমরা তাদের বিড়াল, কুকুর, বাঘ অথবা ভূতের ভয় দেখাই। আর মদিনার মায়েরা বাচ্চাদের ভয় দেখাতে বলত-খাও খাও, ওই যে উমর আসছেন, উমর!

ডাবল স্ট্যান্ডার্ড

চরিত্রের বেশ কিছু ধরন দৃশ্যমান। ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক চরিত্র দিয়েই মানবসত্তাকে মূল্যায়ন করা হয়। তবে দুনিয়াতে সবচেয়ে ঘৃণিত চরিত্র-নিফাকি তথা কপটতা। একজন মুনাফিকের চেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার দুনিয়ায় আর কেউ নেই। মুনাফিক মানেই দ্বিমুখী চরিত্রের বর্ণচোরা লােক। প্রতারক শ্রেণির এই | লােকগুলাে সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের ঘােরতর শত্রু পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বদাই এদের উপস্থিতি ছিল। স্থান, কাল ও সময় ভেদে এদের চেহারা বদলালেও চরিত্র এক ও অভিন্ন। ওপরে বন্ধু সেজে ভেতরে ক্ষতি সাধনে হীন কর্মেই এরা লিপ্ত থাকে সব সময়। ইসলামের ইতিহাসেও এমন গােপন শত্রু ছিল, যারা ইসলাম ও মুসলিমদের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করেছে। এদের মুখে মধু আর অন্তরে বিষ। এরা গিরগিটির মতাে ক্ষণে ক্ষণে রং বদলায়। ফলে এদের চেনা বড়াে দায়। ‘মুনাফিক’ আরবি শব্দ। ইংরেজিতে বলে Hypocrite। উৎপত্তিগতভাবে মুনাফিক শব্দটি ‘আন-নিফাক’ শব্দ হতে এসেছে। আন-নিফাক শব্দটি এসেছে ‘নাফাকা’ শব্দ হতে। নাফাকা শব্দের বাংলা অর্থ সুরঙ্গ (Tunnel)। সাধারণত প্রত্যেক সুরঙ্গের দুই প্রান্তে দুটি মুখ থাকে। তেমনই মুনাফিকও হলাে দুই মুখওয়ালা বা দ্বিমুখী নীতিওয়ালা ব্যক্তি (Two Faced Personality)। মুনাফিকরা দুই দলের কাছে গিয়ে দুই রকম কথা বলে। দুই দলের কাছে দুই রকম চেহারা নিয়ে হাজির হয়। যখন যার কাছে যায়, তখন তার পক্ষে কথা বলে। মহামহিম আল্লাহ রাব্বল আলামিন কুরআনুল কারিমে তাদের এই Double Standard-এর ব্যাপারে বলেছেন।

إرسال تعليق

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.